শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের জন্য

2010-এর শারদীয়া পুজোয় ঠাকুরপুকুর ক্লাবের নিবেদন - শিব-পার্বতীর বিয়ে
...নদে ভেসে যায় লৌকিক নদের আদত অর্থ নদিয়া আমরা যাচ্ছি নবদ্বীপে - শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্মস্থানে, আজও যেখানে সংস্কৃত ভাষা নিয়ম করে অতি যত্নসহকারে শেখানো হয়, এই ইন্টারনেটের যুগেও - প্রাচীন বাংলার বিদ্যাজীবিদের তীর্থস্থানও নদিয়ার নবদ্বীপ শহর বাসুদেব সার্বভৌম, রঘুনাথ শিরোমণি, রামগোপাল তর্কতীর্থ একদা ছিলেন ভারতজয়ী পণ্ডিতশ্রীচৈতন্যধন্য নবদ্বীপে পাড়ায় পাড়ায় পা রাখলেই শিহরণ জাগেএ হেন নবদ্বীপের সোঁদা গন্ধে গা ভাসাতে কেই বা না চাইবেন?
বিগত কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্নাব, থিম পুজোর অঙ্গনে প্রবেশ করে বেশ সাড়া ফেলেছে৷ এ বছর ঠাকুরপুকুর ক্লাব, কলাবতী মুদ্রার সহায়তায় পা বাড়িয়েছে পাশের জেলা নদিয়ার নবদ্বীপ শহরের লৌকিক অঙ্গনে৷ বেশ কয়েক দশক ধরে নবদ্বীপের বাসিন্দারা বাসন্তী পুজোয় শিব-পার্বতীর বিয়ে দেন৷ তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস এই বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন দৈত্যরাজ রাবণ স্বয়ং৷ বিয়ে উপলক্ষ্যে নানান সাজে সেজে ওঠে নবদ্বীপের নানান পাড়া৷ মুণ্ডমূর্তি এবং গৌরীপট্টবিহীন শিবকে বিয়ে দেওয়া হয় সন্তান সন্ততি ব্যতীত উমার সঙ্গে৷ এমত এক কৌতুহল উদ্দীপক এক উত্সবে অংশ গ্রহণ করেন পোড়ামা তলা, যোগনাথ তলা, গোন্দল পাড়াসহ নানান এলাকার সর্বজন এই কাজের সর্বাপেক্ষা উল্লেখ্য অংশ- স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী নির্বিশেষে হবু দম্পতিকে নানান সম্ভাব্য-অসম্ভাব্য দ্রব্যসব উপহার দেওন
এমত একটি লৌকিক ঘটনা, ঠাকুরপুকুর ক্লাব নিজেদের অঙ্গণে এনে উপহার দিতে চলেছে রাজ্যের আপামর জনসাধারণকেনবদ্বীপের লৌকিক এই অনুষ্ঠানের মূল রূপটি বজায় রেখেই ঠাকুরপুকুর ক্লাব চেষ্টা করেছে এই বদলে যাওয়া সময়কে আলতো হাতে ধরার বিশেষ করে বাংলার ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তের লৌকিক-আদিবাসী জীবনের মৃত-প্রায়মৃত নানান শিল্প আঙ্গিককে খুঁজেপেতে নিয়ে এসে এই উপহার সামগ্রীতে সামিল করতে চায় সে, যে কাজের মধ্যে শুধু সেই জীবনের শৈল্পিক দিকটি শুধু প্রকাশ পাবে তাই নয় বাংলার লৌকিক-আদিবাসী শিল্পকলা নিয়েও আকর্ষণ জন্মাবে দর্শকমনে
এই বিবাহের ঘটনাটিকে সামনে রেখে এবং পুজোয় দর্শকদের নিরাপত্তার নানান দিক মাথায় রেখে ঠাকুরপুকুর ক্লাব দুটি পথ ভাঙা কাজ উপহার দিতে চলেছেন - প্রথমটি বাংলার সনাতন বাংলা কাঠামো বাড়ির পুনরুজ্জীবণ, যেখানে আটবাহুবিশিষ্ট তিনতলা মাটির দেওয়ালযুক্ত বাড়ির দুটি তলা দাঁড়িয়ে থাকছে নিচের তলাটির ওপর ভর করে, ভূমির ভরে নয়, ওপরের সমস্ত ওজনটি বহন করছে ভূমিসংলগ্ন নিচের তলাটি আর যে বাঁশ দিয়ে সে ব্যতিক্রমী বাংলা কাঠামোটি তৈরি হচ্ছে, সেই কাঠামোকে কোনোরকমই না ঘিরে, অনাবৃত বাঁশগুলিকে দেওয়া হচ্ছে মুগ্ধ শিল্পের রঙএর ছোঁয়া, আর পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের মেল্লির সাজমাটির দেওয়ালে দেওয়ালে তৈরি হবে নানান ধরণের লৌকিক-আদিবাসী শৈল্পিক রিলিফ
সব থেকে আর্ষণীয় অংশটি হল বাংলার নানান অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লৌকিক-আদিবাসী শিল্পীরাএই বিয়ের সংবাদে আপ্লুত শিল্পীরা উপহার দিচ্ছেন তাঁদের বাপ-দাদারা যুগযুগ ধরে যে ধরণের শিল্পকর্ম করছেন তার নমুনা উত্তরবঙ্গের শিল্পীরা দিচ্ছেন শোলার নানান কাজ, মেল্লি, কাঠের কাজ, দক্ষিণবঙ্গের লৌকিক শিল্পীরা দিচ্ছেন মাটি, কাঠ, গালার, ধাতুর পুতুল, জয়নগরের প্রাক্তণ পটুয়ারা দিচ্ছেন পুতুল, বীরভূম থেকে আসছে প্রায় লুপ্তহতেচলা শেরপাই, আসানসোল থেকে আসছে চাক ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়া শিল্পীদলের মাত্রএকজনেরই মাটির পুতুল, বীরভূম থেকে দুর্গাপট, দশাবতার তাস, মেদিনীপুরের শিংএর কাজ, দক্ষিণদাঁড়ির মনসার ঘট, আদরিনী সরা, লক্ষ্মী-দুর্গাসরা, শাঁখের কাজ, জলঙ্গীর মত্স্যজীবি মেয়েদের আলপনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের দেওয়ালের রিলিফের কাজ, পাথরের কাজ, পট ছাড়াও নানান লৌকিক-আদিবাসী কাজের সম্ভারউত্সাহী দর্শকের জন্য থাকছে স্থানে স্থানে ঘটনা আর শিল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যে লৌকিক বর্ণনার বর্ণমালা ধরে তিনি চলেযেতে পারবেন লৌকিক জীবনের কুড়ে, খোঁজ পাবেন নতুন এক শিল্প ভাবনার যে ভাবনাটির মূল হয়ত লুকিয়েছিল কলকাতার বাইরের গ্রাম-শহরের মিলিত সাধনায়
সামগ্রিকভাবে এই বিয়ের কাজে যে মূল কাঠামোটি তৈরি করা হচ্ছে তাতে একধারে থাকছেন একাকীনী দেবী, অন্যদিকে থাকছেন মু্ণ্ডমূর্তি শিববিবাহ হবে দশমীর দিনদেবীকে বিয়ের মণ্ডপে নিয়ে আসা হবে পালকিতে করে, আর বিবাহের পর পতিদেবকে সঙ্গে নিয়ে কৈলাসে যাবেন নৌকো বাহনে, যে নৌকো আর পালকিও তৈরি থাকছে প্রাঙ্গনে
এমত ব্যতিক্রমী পুজোর ব্যতিক্রমী শৈল্পিক কাজের সঙ্গী হয়ে, সে শিল্পের প্রচারে শুধু মহাদেব বা জগন্মাতার হয়েই নয়, বিয়েতে উপহার দেওয়া বাংলার সমগ্র লৌকিক-আদিবাসী শিল্পীর পক্ষ থেকে বাংলার সংবাদমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ঠাকুরপুকুর ক্লাবআপনারা আসুন, শিল্প দেখুন আর শারদীয় উত্সবের গন্ধমাখা এই সময়ের মৃতপ্রায় শিল্পের আর ঐতিহ্যের গাথা রচনা করে বাঁচতে দিন এই যুগের শিল্পীদেরঅলমিতি বিস্তারেণ
সম্পাদক, ঠাকুরপুকুর ক্লাব 

1 টি মন্তব্য:

  1. লোকনাথ ভট্টাচার্য, সিয়াটেল১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১০ এ ৯:৩৫ AM

    এ ধরনের একটি পুজোর খবর পেয়ে আমি খুবই এক্সাইটেড। বিশেষ করে যে সব ফোক আইটেমের কথা বলা হচ্ছে সে সব আইটেম দেখতে পাওয়াও লাকের ব্যাপার। সাধারণতঃ পুজো যারা করেন তারা অনেকেই ওয়েবস্যাভি হন না, তাই আমাদের মত মানুষ, যাঁরা বিদেশে থাকেন তাদের বেশ খারাপ কাটে।
    এ বছর আমি পুজোয় কলকাতায় থাকতে পারছি না। আপনাদের ব্লগে যদি রেগুলার আপডেট করা হয় তা হলে ভাল হয়।

    উত্তরমুছুন